গল্প:হারানো প্রাপ্তি/দিয়ান রীনা

গল্প: ‘হারানো প্রাপ্তি’
—দিয়ান রীনা
………….
—মা আমি আসছি ।রাতে পরোটা আর আলুর দম করে রেখো।এই লকডাইন এ ভালো করে খেতে পায়নি।
—হ‍্যাঁ রে খোকন করে রাখবো।ভালো করে গাড়ি টা চালাস।আর ব‍্যাগ পত্তর ভালো করে রাখ।বুজলি।আজ কতদিন পর দোকান খুলতে যাচ্ছিস।
—তুমি কিছু চিন্তা কোরো না মা।অনলাইনে দেখেছি দুটো টিকিটে মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জিতেছি।এবার দোকান টা ভালো করে সাজাবো। এখন আসি।
—হ‍্যাঁ সাবধানে যাস।দুগ্গা দুগ্গা।
অনিত মন্ডল একজন ছাপোষা সাধারণ মানুষ।একটা বাজারে লটারি র টিকিট এর দোকান।লকডাইনের গেরোয় সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।অতি অমায়িক ছেলে।তবে শিশু দের একদম পছন্দ করে না।ছোট ছেলের দুষ্টুমি দেখলে রাগে তার গা চিড়বিড় করে।
—এই এই,পিঠ ফাটিয়ে দেবো জানিস,এই ভাবে কেউ রাস্তার মাঝে আসে।এখুনি তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেত।বজ্জাত ছেলেরা।
—দেখো কাকু,বজ্জাত ক ইবেন না।আব্বু কে ডেকে আনবো।ওটা একটা গালি।আব্বু কয়েছে।আমরা একটু খেলছিলাম, বুজতে পারিনি।ঠিক আছে যাও।এবারের মতো ছেড়ে দিলাম বুজলে।
—ওরে আমার কোথাকার কানাই বলাই এলো।রাস্তার মাঝে এসে আবার জ্ঞান দিচ্ছে।যা পালা এখান থেকে।অনিত এর বকুনি পেয়ে রফিক এর দুই ছেলে রাস্তা থেকে সরে গেল।রফিকুল একজন মুসলমান গরীব দোকানি।অনিত এর পাশেই তার একটি ছোট্ট সাইকেল সারাইএর দোকান।রফিকুল এর দুটি ছেলে সবসময় বাবার আশেপাশে থাকে।তার ফলে অনিত এর দোকানে এরা প্রায় ঘোরাঘুরি করে।মাঝে মাঝে টিকিট ও দেখে।বাচ্চা মানুষ টিকিট এর প্রতি খুব আকর্ষণ।আর এটাই অনিত এর চক্ষুশূল।রফিকুল এর দুই ছেলে অনিত এর সাথে কলকল করে কথা বলে।অনিত রাগে গরগর করে।
হয়তো চকচকে রংবে রংয়ের টিকিট দেখে বলে
—কাকু এটা দেবে,আমরা জমাবো।কি সুন্দর দেখতে।আরিফ একটা কুড়িয়ে পেয়েছিল,কিন্তু আমি পাইনি,দাও না গো আমায়।
—এই আসিম এখান থেকে যাবি??না তোর আব্বু কে ডাকবো।এত কেন জ্বালাস তোরা আমাকে।যা না এখান থেকে।
অনিত এর কথা শুনে দুই ভাই মুখ নীচু করে চলে যায়।এই সব ঘটনা লকডাইনের আগে।দোকান এ এসে অনিত অনলাইনে জেতা টিকিট দুটো নিয়ে আগে ফোন করে কোম্পানি কে।আগে থেকে কথা বলে রাখার জন্য কোম্পানি জানাই তার এক‍্যাউন্ট এ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।টাকা তুলতে অনিত যায় ব‍্যাঙ্কে।টাকা তুলে নিয়ে আবার দোকানে ফিরে আসে।
লকডাইনের পর দোকান খুলতে ভালো ই কেনাবেচা হয়।মোটামুটি অনিত রাতে ব‍্যাগে পুরে সত্তর হাজার টাকা। অনেক দিন পর ভগবান মুখ তুলে চেয়েছে অনিত এর দিকে।এই টাকা নিয়ে অনিত দোকান টা আরোও বড় করে তুলবে এই আশা নিয়ে বাইকে স্টার্ট দেয়।মনের খুশিতে বাইক চালিয়ে ঘরে ফিরে আসে।বাইক থেকে নেমে বাইকের পিছন থেকে ব‍্যাগটা নামাতে গিয়ে দেখে কোন ব‍্যাগ নেই বাইকের পিছনে।
ব‍্যাগ না দেখতে পেয়ে অনিত হায় কি হোল বলে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।পাশাপাশি লোক এসে ধরাধরি করে অনিত কে ঘরের ভিতরে নিয়ে আসে।চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনলে অনিত পাগলের মতো কান্না কাটি করতে থাকে।
যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরেছিল,সেই রাস্তায় আবার ফিরে যায় কিন্তু কোন ব‍্যাগ দেখতে পাই না।সারারাত পাগলের মতো নিজের চুল ছিঁড়তে থাকে অনিত।
এদিকে রফিকুল এর চোখ ছানাবড়া।ভয়ে ছেলেদের জিজ্ঞেস করে।
—তোরা এই সব কোথায় পেলি??হা আল্লা শেষে ছেলেরা চুরি করতে শিখলো।লোক সম্মুখে মুখ দেখাবো কি করে??হায় আল্লা।
—আব্বু বিশ্বাস করো,আমরা চুরি করিনি।এটা রাস্তায় কুড়িয়ে পেলাম।তাই আনলাম।এতে কি আছে আব্বু/?
—কিছু নেই, যা তোরা ,তোদের আম্মু ভাত খেতে ডাকছে।যা এখান থেকে।
—হায় আল্লা,কার জিনিস??তার এখন কি অবস্থা, সেটাই ভাবছি।তুমি তাড়াতাড়ি তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।যার জিনিস সে তো শোকে পাগল হয়ে যাবে।আল্লা,রহেম করো।আমিন
‘স্থানীয় সংবাদ’এ আমি আছি সৌমেন মিশ্র।আজ আমাদের সঙ্গে আছেন অনিত বাবু।উনি কিছু বলতে চান।বলুন অনিত বাবু।
—আমি অনিত মন্ডল,সামান্য একজন দোকানি।কাল রাতে আমি বাড়ি ফেরার সময় আমার একটা ব‍্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়।আপনাদের সবার কাছে সে দাদু,বা দিদিমা,ভাই,বোন,কাকু,যেই হোন না কেন,আমার ব‍্যাগটা ফিরিয়ে দিন।আমি কথা দিচ্ছি, যে ব‍্যাগটা ফিরিয়ে দেবেন তাকে আমি পুরষ্কার দেবো।আমার সারাজীবন এর সঞ্চয় আছে ওতে।ওটা না পেলে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।
এই বলে কান্না য় ভেঙে পড়ে অনিত।
—অনিত বাবু,এত ভেঙে পড়বেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের সব দর্শক এর দের কাছে আমাদের অনুরোধ কেউ যদি ব‍্যাগটা পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই অনিতবাবুর ফোন নং এ ফোন করবেন।অনিত বাবু র নং হলো ৮৯৭***।
—আব্বু দেখো,অনিতকাকুকে টিভিতে দেখাচ্ছে।কেমন কাঁদছে দেখো।
—কোথায় ,দেখি চল তো।
—ওই দেখো রুকসানা দের টিভিতে অনিত কাকু কাঁদছে।
—আচ্ছা তোরা যা।আমি দেখছি কি করা যায়।
—হ‍্যা লো অনিতবাবু বলছেন।আমি রফিকুল বলছি।আপনি এক্ষুনি আমার বাড়িতে একবার চলে আসুন।তাড়াতাড়ি।
রফিকুল এর কথা শুনে অনিত আসে রফিকুল এর বাড়ি।রফিকুল বাড়িয়ে দেয় একটা ব্রাউন কালারের ব‍্যাগ।চেন খুলে অনিত দেখে তাতে আছে কয়েকটি টাকার বান্ডিল।দুহাত দিয়ে রফিকুল কে জড়িয়ে ধরে অনিত।
—কোথায় পেলেন এই ব‍্যাগ রফিকুল দা।??
—আরিফ আর আসিম এই ব‍্যাগ কুড়িয়ে এনেছিল রাস্তা থেকে।রুকসানা দের ঘর থেকে টিভি দেখে দুই ভাই বাড়ি আসছিল তখন দেখে রাস্তায় পড়ে আছে ব‍্যাগ টা।আমি বিশ্বাস করতে পারিনি।ভেবেছিলাম ওরা চুরি করেছে।পরে ওরাই আমাকে টিভির পর্দায় তোমার কান্না দেখালো।তখন বুজতে পারলাম এটা তোমার ব‍্যাগ।
—আরিফ আর আসিমকে একবার ডাকুন না দাদা।
দুই পুচকে কে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলো অনিত।আর বলতে লাগলো।
—মা বলতো,শিশুরা নাকি ঈশ্বর।ওদের মন এত পবিত্র ভগবান স্বয়ং ওদের সাথে থাকেন।আজ আমি ভগবানের দেখা পেলাম।তোদের দুজন কে আমি কত কষ্ট দিয়ে দোকান থেকে বার করে দিয়েছি।কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম তোদের কে তো স্বয়ং ঈশ্বর আমার কাছে পাঠিয়েছিল আমার চোখ খুলে দেবার জন্য।অনেক বড় হোস তোরা।এত ভালো যার বাবা,তার সন্তান রাও হবে বড় মনের মানুষ।আজ তোরা দুজন আমাকে নব জীবন দান করলি।তোদের ঋন আমি শোধ করতে পারবো না।তবুও কিছু টাকা তোদের জন্য…
—না অনিত ভাই।এটা দেবেন না।আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।তুমি ভাই ওদের আশীর্বাদ করো ওরা যেন এই মনটা শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে।মানুষের বিপদে আপদে ওরা যেন মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়।আর কিছুই চাই না।
এই বলে রফিকুল তার দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যায়।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]

নিউজ ডেস্ক: ‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: ss.ghatal@gmail.com •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।