‘ঘাটাল থানার কোন গ্রামের নাম কেন হয়েছে…’ —উমাশঙ্কর নিয়োগী

উমাশঙ্কর নিয়োগী,‘স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: ‘নামে কী আসে যায়’—একথা স্থাননামের ক্ষেত্রে সর্বৈব প্রযোজ্য নয়। বেশিরভাগ স্থাননামের পেছনে কোন না কোন ইতিহাস থাকে, নাম করণের কারণ থাকে। কালক্রমে মানুষ কেবল নামটাই বহন করে চলে; কারণ,ইতিহাসের খোঁজ রাখে না। এই ক্ষুদ্র নিবন্ধে ঘাটাল থানার গ্রামনামের কারণ ও ইতিহাস খোঁজার যৎসামান্য চেষ্টা থাকবে।
ঘাটাল। ঘাটাল নাম নিয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’। কেউ বলেছেন, ঘাটের পাশে উঁচু বসতি স্থান ঘাটাল। ঘাট+ টাল = ঘাটাল , আবার অন্য মতে, ঘট্টপাল>ঘাটপাল>ঘাটাল শব্দের উৎপত্তি। নদী পথে বাণিজ্য এবং পারাপার করার জন্য সংশ্লিষ্টর কাছ থেকে শুল্ক আদায় করার প্রথা বহ দিনের পুরানো রীতি। সমগ্র এলাকার প্রধান শুল্ক সংগ্রহকারীকে পাল বলা হয়। তুলনীয় নগর পাল। প্রধান শুল্ক

আদায়কারী এই ঘাটের পাশে থাকতেন তাই ঘট্টপাল। ঘাটাল। আবার কারো মতে এটি প্রাচীন বাণিজ্য নগরী। জল পথে বহু পণ্যবাহি নৌকো এখানে এসে ঘাটগুলিতে ভিড় জমাত। তাই ঘাটাল। ‘ঘাট+আল (বহুঅর্থে)=ঘাটাল। উল্লেখ করা যায়, এই অঞ্চলে অনেকের পদবী ঘাটি। এক সময় এরা নৌকো চালানো ও নদীঘাট পারাপারের কাজ করতেন। স্থানীয় উচ্চারণে ঘাঁটি। বহু ঘাঁটি যেখানে বসবাস করে তাই ঘাঁটিয়াল>ঘাঁটাল>ঘাটাল।
বেশ কিছু গ্রামনাম কোন না কোন উদ্ভিদের নামের সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রামগুলি খুব প্রাচীন। শিমুলিয়া।দিক শব্দ শিম্বল>শিমুল। শ্রী ফল অর্থ বেল এর থেকে শ্রীপুর। অর্জুন আড়ি। যে গ্রামে অর্জুন গাছে ঢাকা। আড়ি বা আড়া বলতে ডাঙা জমি বোঝায়। খড়ি ঘাস আছে খড়িকা। গেড়্যা অর্থ ছোট পুকুর। যে গেড়্যার আশেপাশে খড়িঘাস আছে এমন যে গ্রাম খড়িগেড়া। খড়ার। পর্যাপ্ত খড় পাওয়া যায়। খশবাড়>খাসবাড়। বেনা ঘাসের মূলকে খশ বলে। এই মূল দিয়ে খশখশ তৈরি হয়। মন্দার>মাদার। মন্দারিয়া, মন্দারপুর মাদার গাছ কেন্দ্র করে নাম। মালঞ্চ এখানে বিভিন্ন ফুল পাওয়া যেত। জম্বীর>জামির গঁড়া লেবু। জামির>জামিরা। কুশবন>কুশমন। কুশপোতা > কুশপাতা। পোতা অর্থ উঁচু জমি। যে উঁচু জমিতে প্রচুর কুশ জন্মায়। বেলশ্বর। বন হরিসিংপুর, হরি সিংহ প্রথম বসবাস করেছেন এই গ্রামে তখন ওখানে বন ছিল তাই বন হরিসিংপুর। জয়বাগ। জয় নামের কোন ব্যক্তির বাগানের জন্য বিখ্যাত গ্রাম। কেঁচা। কুঁচ ফল। গ্রাম্য উচ্চারণে

কাঁচ ফল।কাল ফোঁটা যুক্ত লাল ফল। স্বর্ণকারেরা ওজনের রতি হিসেবে এই ফল ব্যবহার করতেন। যে গ্রামে কাঁচ ফল পাওয়া যেত সেই গ্রাম কেঁচা? মরিচ বলতে লংকাকে বোঝায়। সব লংকাই মরিচ নামে পরিচিত হত। এই জন্য গোলমরিচ। যে গ্রামে প্রচুর মরিচ উৎপাদন হত সেই গ্রাম মরিচা নামে পরিচিত হয়েছে।
কিছু গ্রাম বৃত্তি নামের। ঘাটাল। ঘেটালদের গ্রাম। কোটালপুর। কোটাল অর্থ প্রহরী। যে গ্রামে কোটালদের বসবাস তাই কোটালপুর। কিসমৎ অর্থ নসিব। ভাগ্যবান কোটালদের গ্রাম কিসমৎ কোটালপুর। মোল্লা অর্থ মুসলমান পুরোহিত। মোল্লা>মুল্লা >মুল্লা গ্রাম>মূলগ্রাম। গ্রামের মানুষেরা বলেন তাঁদের গ্রামে একশো পীর কবরে ঘুমিয়ে আছেন। আবার যে গ্রামে মোড়লের বাস তাই মণ্ডলিক মণ্ডলিক>মূললে>মূলগ্রাম। অজগব হরধনুর অপর নাম। যে গ্রামে অজগব চালানোর মত শক্তিশালী ধনুর্ধরদের বাস তাই অজগব নগর> অজবনগর। যারা কূপ খনন করতো তাদের কুরানী বলে। কুরানীদের গ্রাম কুরান। চাল তৈরিকারীদের গ্রাম চাউলি। রথীপুর। রথী অর্থ বীর। বড়দা শোভা সিংহের রাজধানী। এর পাশে বীর যোদ্ধাদের বসবাস স্বাভাবিক। রথীদের অর্থাৎ বীর যোদ্ধাদের গ্রাম রথীপুর। গোপমহল। গোপ মানে গোয়ালা তাদের

মহল গোপমহল। আলুই। শিশুর গা -বালসানোর ওষুধ আলুই। এই গ্রামে শিশুচিকিৎসক ভালো ছিলেন তার থেকে নাম হয়েছে আলুই। কোন রাজার দেওয়ানের নিজস্ব এলাকা দেওয়ানচক।
ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি সম্বলিত কিছু গ্রামনাম। দলপতি পুর। দলপত রাজার নাম ‘বাহারিস্তান-ই-ঘায়েরিতে’ উল্লেখ আছে। তাঁর নামাঙ্কিত গ্রাম দলপতপুর > দলপতি পুর। সম্ভবত শোভা সিংহের রানির বসানো বাজার রানির বাজার। এই বাজার শোভা সিংহের তৃতীয় গড়ে অবস্থিত। শোভা সিংহের ভাই হিম্মৎ সিংহ। এর নামে হিম্মৎ> হিমৎ>হেমনগর। পাশের থানায় হেমৎপুর। কনক সিংহ নামে এক রাজার স্মৃতি বহন করছে কনকপুর।চন্দ্রকোণা থানার কঙ্কাবতী এই রাজারই নাম অনুসারে। বড়দা<বড়দহ। বড়দা গ্রাম নামের সঙ্গে ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিদ্রোহী সামন্ত রাজা শোভা সিংহ বড়দায় তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ১৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের আশ্রয় ধন্য বর্ধমানরাজ কৃষ্ণরামকে পরাজিত করে বর্ধমান দখল করেন। তিনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে তিনটি গড় তৈরি করে অনেকগুলি দিঘি খনন করেন রাধাসাগর, সিংসায়র, চন্দ্রাদিঘি, রণসায়র ইত্যাদি। ঔরঙ্গজেবের নাতি আজিমুদ্দিনের হাতে বড়দা গড় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। কাঁকি খাল খনন শোভা সিংহের অক্ষয় কীর্তি। কাঁকি খালের পাশে অবস্থিত রাজনগর। এক সময় শোভা সিংহের পূর্ব পুরুষরা এখানে বসবাস করেন। শিলাবতী নদীর ধারে হয়তো তারা পরে বসবাস করেছেন কোন এক সময় তাই শিলারাজনগর। সিংহ পরিবারের কোন এক বীর যোদ্ধার স্মরণে বীরসিংহ। সিংহ পদবিধারীর প্রথম বসবাস তাই সিংহডাঙা। আমোদরকূল। অনেক নদী এবং খাল বর্তমানে বিলুপ্ত। তার মধ্যে আমোদর একটি। এই নদীর কূলের গ্রাম। প্রতাপপুর। স্থানীয়দের কথায় পাঁচমাড়ো প্রতাপপুর। প্রতাপ নামের কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি এই গ্রামে পাঁচটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতাপের নাম অনুসারে প্রতাপপুর। যদুপুর। বিখ্যাত শিব মঙ্গলের কবি রামেশ্বর চক্রবর্তীর জন্মস্থান। সত্যপীরের পাঁচালি এবং শিবমঙ্গল নিজের গ্রামে রচনা করতে পারেননি। শোভা সিংহের ভাই হিম্মৎ সিংহের অত্যাচারে জন্ম ভিটে ত্যাগ করে কর্ণগড় চলে যান। সেখান কাব্য রচনা করেন।
কুণ্ড>কুন্ডু। কুণ্ড অর্থাৎ পানীয় জলাধার। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পূর্বে জলাশয় থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতো।ধনী বাড়িতে কূপ তথা কুয়ো থাকলেও সেখান থেকে জল নেবার অধিকার সাধারণের ছিল না। অনেক পরে নলকূপ এসেছে।পানীয় জলের পুকুরগুলি কোন ধনবান ব্যক্তি জনহিতার্থে খনন করিয়ে দিত। কুণ্ডগুলি তাদের নামে চিহ্নিত হত। ভেরি বলরামকুন্ডু ।ভেরি বাদক বলরাম নামের কারো দ্বারা এই কুণ্ডটি খনন করানো হয়েছিল। অনুরূপ জয়কুন্ডু। লাল পদবিধারীদের কাটানো কুণ্ড লালকুন্ডু। কিন্তু দুবরাজ কুণ্ড অর্থ দুবরাজ নামক ধানের প্রচুর উৎপাদন হয় এই গ্রামে।
সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির জমি বা অন্য মৌজায় থাকা জমিকে চক্ বলে। চক নামের আগে বা পরে বসে। চক লছিপুর । উত্তর ভারতের উচ্চারণে লক্ষ্মী>লছমি>লছি। চক সাদি। কোন অশ্বারোহী সৈন্যের জমি। দৌলতচক, প্রসাদ চক, কালীচক, রাধাচক, পাত্র অর্থ মন্ত্রণাদাতা,মন্ত্রী। পাত্র>পাতর>পাথর। পাতরচক>পাথরচক। অনুরূপ শ্যামচক, মোহনচক ইত্যাদি।
আড়া অর্থ উঁচু ডাঙা জমিতে বাসস্থান। পাত্রদের আড়া >পাথরা। দন্তীআড়া > দাঁতি আড়া। দন্তী কুসুম মানে কুন্দ ফুল। যে আড়াতে কুন্দ ফুল হত তাই দন্তীআড়া। আবার দান্তি অর্থ বশীভূত। যেখানে বশীভূতরা বাস করে তাই দান্তি আড়া। হরিনাগেড়্যা। হরি নাই । নাই মানে নাপিত। হরি নাপিতের গেড়্যা। কামারদের গেড়্যা। কামারগেড়্যা। বাঁওড় মানে স্রোতহীন জলবেষ্টিত স্থান। বাঁওড় থেকে বাড়। এই বাঁওড়ের পাশে প্রথম বসতি স্থাপনকারীর নাম অনুসারে বাড় গোবিন্দ, বাড় নবীন, বাড় আনন্দী। জলসরা। জল যেখানে জমে থাকে না সরে যায় সেই গ্রাম জলসরা । জল+স্রব(রা) জলসরা। মশহুর মানে সর্বশ্রেষ্ঠ, বিখ্যাত। মশহুর পুর>মশরপুর।
পট্টন অর্থ জনপদ,নগর। পট্টন>পাটন। পাটন অর্থেও নগর, জনপদ বোঝায়। পাটন>পাটনা>পান্না। পান্না একটি সুপ্রাচীন জনপদের নাম। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় পান্না এককালে জৈন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস স্থল ছিল। পান্না গ্রাম থেকে জৈন ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির অনেকগুলি প্রাচীন ঐতিহাসিক উপাদান পাওয়া গিয়েছে। নদী বাঁধ ভাঙ্গার ফলে যে দহের সৃষ্টি হয়েছে তার পাড়ের গ্রাম ভাঙাদহ>ভাঙাদ। কোঙার জাতিবিশেষের বংশগত উপাধি। কোঙার>কোনার। কোঙারদের গ্রাম কোনার। দই থেকে ননী তুলে নেবার পর অবশিষ্ট অংশকে ঘোল বলে। যে গ্রামে ঘোল প্রস্তুতকারকের সংখ্যা বেশি তাই ঘোলা। ঘোলশাহি>ঘোলশাই ।উৎকৃষ্ট ঘোল পাওয়া যায় যে গ্রামে ঘোলশাই। আবার একফালি যে গ্রাম এবং যেখানে প্রচুর শাঁই গাছ আছে তাই ঘোলশাঁই> ঘোলশাই। ইড়, ইড়িকা মানে পৃথিবী। পৃথিবী পালন করতে পারে অর্থাৎ অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী গ্রাম ইড়+পালা (পালন পোষণ করা)= ইড়পালা। সোরাই মানে জল রাখার কুঁজো। গ্রীষ্মের সময় জল ঠাণ্ডা রাখার জন্য কুঁজোতে রাখা হত। সোরাই> সোয়াই। কুঁজো তৈরিকারীদের গ্রাম সোয়াই।
‘বাংলা স্থাননাম ‘ গ্রন্থে সুকুমার সেন ‘রোল’ অর্থে বিশেষ ভূমিখণ্ড বলেছন। মার্গণ>মাঙ্গন>মাঙ্গা। চেয়ে নেওয়া নির্দিষ্ট এলাকা মাঙ্গারোল>মাঙরুল। আদিবাসীদের দেবতা ‘বোঙ্গা’। এই দেবতার জন্য বিশেষ ভূমিখণ্ড বোঙ্গারোল>বেঙ্গারোল এর থেকে ব্যাংরাল? আবার বেঙ্গা অর্থ কাপাস তুলো ফলানো। তুলো চাষের জন্য চেয়ে নেওয়া ভূমি। বেঙ্গারোল>বেঙরোল>ব্যাংরাল। বন্যার সময় বালি জমে যে জলা জমি ডাঙাতে পরিণত হয়েছিল সেখানে গড়ে ওঠা গ্রাম বালিডাঙা। বাঘ আলংকারিক অর্থে বড় বোঝায়। বাঘা তেঁতুল,বাঘা উকিল। বাঘনালা মানে বড় নালার পাশে থাকা গ্রাম। দ্বন্দ্বীপুর। এই গ্রামের বিখ্যাত শিব দণ্ডেশ্বর। দণ্ডেশ্বর পুর>দণ্ডিশ্বরপুর> দন্দীশ্বরপুর >দ্বন্দ্বীপুর। বাটি বলতে প্রাচীর ঘেরা বাড়ি বোঝায়। রতনেশ্বর নামে কোন বিখ্যাত বাড়ির পরিচয়ে এই গ্রামের পরিচয় হত এই জন্য গ্রামের নাম রতনেশ্বরবাটি। এই রকম কৃষ্ণবাটি।
দেবদেবীর নামে বেশ কয়েকটি গ্রামের নাম আছে। ধর্মপুর। এক সময়ে ঘাটাল দাসপুর এলাকার ধর্মঠাকুরের উপাসনা সাড়ম্বরে হত। বহু ধর্মঠাকুরের মন্দির আজও আছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লৌকিকদেবীর স্থান হয়ে গিয়েছে এইসব মন্দিরে। ধর্মঠাকুরের নামে গ্রাম ধর্মপুর। লৌকিক অনার্য দেবতা ধর্ম ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারের কাহিনী নিয়ে বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগে ধর্মমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। স্বর্গের নর্তকী জাম্ববতী অভিশপ্ত হয়ে মর্তে বেণুরায়ের কন্যারূপে জন্ম গ্রহণ করেন।তখন তাঁর নাম হয় রঞ্জাবতী। ঢেকুর গড়ের রাজা কর্মসেনের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। পুত্র লাভের জন্য ধর্ম ঠাকুরের কঠোর তপস্যা করে পুত্র লাভ করেন। পুত্রের নাম লাউসেন। রঞ্জাবতীর নাম থেকে রঞ্জাপুর। দেবতার নামে শিবপুর, শ্যামসুন্দরপুর, রঘুনাথপুর, জয়কৃষ্ণপুর ইত্যাদি। গঙ্গা এক সময় সকল নদীকে বোঝাত। গঙ্গা>গাঙ যে কোন নদী। গঙ্গাদেবীর দয়াতে টিকে থাকা গ্রাম, গঙ্গাপ্রসাদ। নদী তথা গঙ্গা পাড়ের দাসপুর, গঙ্গাদাসপুর। দাস পদবীধারিদের গ্রাম দাসপুর। বৈষ্ণব বা দাস অর্থে কেউ কেউ সেবক বা জেলে বলেছেন।
মুসলমান শাসন কায়েম হওয়ার পূর্বে বাংলাতে ব্যক্তি নামে গ্রামনাম ছিল না। মুসলমান শাসকের ব্যক্তি নামে গ্রামের নামকরণ হত। চৈতন্যদেবের পরবর্তী কালে হিন্দুদের ব্যক্তি নামে গ্রামনাম হতে থাকে। গ্রামের শ্রেষ্ঠ মানুষের নামেই গ্রামের নাম হত। বেশ কিছু গ্রামনাম ব্যক্তি না গ্রাম দেবতার তা সনাক্ত করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি নামও দেবদেবীর নামেই রাখা হয়। শীতলপুর, ঈশ্বরপুর> ঈশরপুর, মোহনপুর,হরিসিংপুর,লক্ষ্মণপুর, অমরপুর ,ইয়াকুবপুর, আনন্দপুর, যদুপুর ইত্যাদি এগুলি ব্যক্তি নাম বলেই মনে হয়। সিংহপুর, ইসলাম পুর এগুলি পদবি থেকে হয়েছে। রঘুনাথপুর, রামচন্দ্রপুর, শ্যামসুন্দরপুর, গোপীনাথপুর, রাধাকান্তপুর ইত্যাদি এগুলি দেবতার নামে গ্রাম।
নগর শব্দটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক। যেখানে বেশ কিছু অট্টালিকা থাকত তাকেই নগর বলা হত। রাধানগর,অজবনগর, গোপালনগর, হেমনগর, জয়নগর প্রভৃতি। শোভা সিংহের তৃতীয় গড়ে একটি বাজার রানির বাজার নামে আখ্যাত। শোভা সিংহের দ্বিতীয় গড়ে একটি বাজার নির্মলবাজার নামে পরিচিত। উদয় নামক কোন একজনের প্রতিষ্ঠিত গঞ্জ, উদয়গঞ্জ।
মনশুকা। হয়তো এই গ্রামে শুকদেব নামে খুব বড় মনের মানুষ বাস করতেন। মানুষের আপদে বিপদে সব সময় পাশে দাঁড়াতেন। সেই জন্য জনতা বলতো, ‘মন তো শুকার’। সেখান থেকে মনশুকা? রোহিতপুর। এখানকার জলাশয়ে বড় বড় রুই মাছ পাওয়া যেত। তাই রোহিতপুর।
ঘাটাল থানায় মোট ১৩৯ টি মৌজা আছে। এক মৌজায় একাধিক গ্রামও আছে। তাদের সকলকে নিয়ে আলোচনা করা গেল না। গত সেন্সাস অনুসারে সবথেকে বেশি ৮৫৮৩ জন মনশুকা মৌজায় এবং সবথেকে কম ৮৬ জন পাথরচক গোবিন্দপুরে বসবাস করেছেন।
পরিশেষে জানাই, আমি ভাষাতত্ববিদ নই। সুকুমার সেন, শ্রী কামিনীকুমার রায় ,পঞ্চানন রায় কাব্যতীর্থ প্রমুখের বই পড়ে গ্রামনামের উৎস খোঁজার যৎসামান্য চেষ্টা করেছি মাত্র। পাঠক নিজ গ্রামনামের উৎস খুঁজলে লেখা সার্থক হবে।
🙏ঋণী:•বাংলা স্থাননাম: সুকুমার সেন •লৌকিক শব্দকোষ:কামিনীকুমার রায় !ঘাটালের কথা:পঞ্চানন রায় কাব্যতীর্থ ও প্রণব রায় •রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড তারাপদ সাঁতরা 🙏কৃতজ্ঞতা জানাই সুকান্ত সিংহ, দেবাশিস কুইল্যা ও দেবাশিস ভট্টাচার্যকে। 

নিউজ ডেস্ক: ‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: ss.ghatal@gmail.com •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।