বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিনে ভুরিভোজ হবে কেন? —সুমন বিশ্বাস

বিদ্যাসাগরের মৃত্যু দিনে ভুরিভোজ হবে কেন? —সুমন বিশ্বাস, মহকুমা শাসক, ঘাটাল
•লেখার শুরুতেই প্রণম্য প্রাতঃস্মরণীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা [‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]জ্ঞাপন করছি।
আমি যে পড়শোনা শিখে এতদূর আসতে পেরেছি সেই জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান যার সেই ঈশ্বরের জন্মভূমিতে বার বার আসার যে সৌভাগ্য হয়েছে সেইজন্য আমি গর্বিত। বিগত বছরে ১৩  জুলাই আমি এই মহকুমাতে কাজে যোগ দিই এবং প্রথম সপ্তাহান্তেই আমি বীরসিংহ গ্রামে আসি। কাজে জোগদান করার আগেই ঘাটালে পোষ্টিং অর্ডার পেয়েই এটা ভেবে আনন্দ পেয়েছিলাম যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহকুমাতে পোষ্টিং হয়েছে। গতবছর প্রথমে এসেই যে অনুষ্ঠানে সকলের সাথে পরিচয় হয়েছিল সেটা ছিল ১৩ই শ্রাবণের অনুষ্ঠান। তারপর থেকে কম করে ১০০ বার এসেছি এই বীরসিংহ গ্রামে।
প্রণম্য এই ঈশ্বরের মৃত্যু দিন মানেই শোকে বিহ্বল হওয়ার দিন আমাদের সবার কাছে। আমরা পড়াশোনা করে যারা বাংলা ভাষায় পড়তে শিখেছি তাদের কাছে বিদ্যাসাগর ঈশ্বর। আমার কাছে তিনি প্রকৃত ঈশ্বর। ঈশ্বরের প্রয়াণ দিবসের সাথে তাই আমার আবেগ এভাবে জড়িয়ে। আপনারা হয়ত ভেবে অবাক হচ্ছেন কেন আমার এত আবেগ? আমি মনে করি বাঙালি জাতির তিনি জনক। একটা জাতিকে তিনি মেরুদণ্ড সোজা করতে শিখিয়েছেন। সারাজীবন তিনি সংঘাতে জড়িয়েছেন তবুও কারো কাছে মাথা নোয়াননি। এত বড় মহাপুরুষ বাংলায় আর দ্বিতীয় কেউ জন্মেছেন বলে আমার মনে হয় না।
মহাপুরুষদের প্রয়াণ দিবস যেভাবে আমরা দেখতে অভ্যস্থ সেটার কিছু প্রমাণ দিচ্ছি। অনুরোধ আমার এই কথাগুলো আপনারা মন দিয়ে এবং যুক্তি দিয়ে শুনবেন। বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস ২২ শে শ্রাবণ, কল্পনা করুন সেই অনুষ্ঠানে তার জন্মস্থান জোড়াসাঁকোতে গণ আহারের আয়োজন হচ্ছে এবং সবাই তা সানন্দে গ্রহণ করছে। বাঙালি জাতি সেটা কি মানতে পারবে? জাতির জনক গান্ধীজির  প্রয়াণ দিবস ৩০ জানুয়ারি এরকম গণ আহার মানবে দেশবাসী ?
বিদ্যাসাগর আমাদের বাঙালি জাতির জনক। আর এখন  মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তা ও চেতনায় বিদ্যাসাগর যেভাবে সম্মানিত হয়েছেন, যে ভাবে বীরসিংহ গ্রাম উনার নজরে এসেছে তাতে করে আমরা সবাই উনার কাছে চিরঋণী। অনেক দিন ধরে ঈশ্বরের প্রয়াণ দিবসে গণ আহার চলচে এটা আপনাদের আবেগ কিন্তু এই প্রথা বিদ্যাসাগর অনুরাগীদের ব্যথিত করবে বলে আমার মনে হয়েছে।  হিন্দু ধর্মালম্বীরা ভগবান কৃষ্ণের জন্মদিনে তালের বড়া এবং অন্য আহার গ্রহণ করে মৃত্যু দিনে নয়।
আমাদের পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর আলিনান গ্রামে গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনীর মৃত্যদিনে আজও গ্রামে অরন্ধন পালিত হয়। তাই আমি করজোড়ে আপনাদের কাছে আবেদন করছি, এই গণ আহার ঈশ্বরের জন্মদিনে বা অন্য কোনও দিনে করা যেতে পারে। বিগত বছরে আমরা ৪  ডিসেম্বর বিদ্যাসাগর উপাধি পাওয়ার দিন হিসাবে পালন করেছি । উনার আরও অনেক পালনীয় দিন উদযাপন করাই যায়। উনি আমাদের সকলের ঈশ্বর তাই উনার জন্মদিন আরো সারম্বরে আমরা উদযাপন করবো কথা দিলাম। আসুন বাংলার অন্যান্য মহাপুরুষ এর মৃত্যদিন যেমন শোকের আবহে পালিত হয় সেভাবে আমরা পালন করি।
আমরা রক্তদান, বস্ত্রদান, গাছ লালানো, দরিদ্র ছাত্রদের বই দান এসবের মাধ্যমে পালন করি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বীরসিংহের এই ঈশ্বরের প্রয়াণ দিবসে গণআহার বাইরের মানুষদের ব্যথিত করবে। তাই আমার অনুরোধ আসুন এই প্রথা ভেঙে নতুন করে ভাবি। আমি প্রয়োজনে প্রতিটি অধিবাসীর বাড়ি বাড়ি জোড় হাত করে ঘুরতেও রাজী সবাইকে বোঝানোর জন্যে।
ঈশ্বরের প্রতি আবেগে আমি কথাগুলো বলছি। আমার মনে হয়েছে আমার মত অনেক বঙ্গবাসীর মনে এই গণ আহার বিরূপ মানসিকতা গড়ে তুলবে। সভ্যতার আলোয় আলোকিত হয়ে আমরা আসুন নতুন ভাবনায় ভাবিত হই। বিদ্যাসাগর এখন শুধু বাংলার নয় উনি বিশ্বেরও সম্পদ। আগামী ১৩ই শ্রাবণ সারা বাংলা থেকে অনেক মানুষ আসবেন। তাছাড়া এই শোক জ্ঞাপনের সাথে সামাজিক কাজকর্মগুলি মিডিয়ার দৌলতে সবার কাছে ছড়িয়ে পড়বে।
আসুন, নতুন করে ভাবি! আমি আপনাদের শত্রু নই। আমি খুবই মনকষ্টেও ভুগেছি কাল। আপনাদের সাথে আমার কোনও সংঘাতও নেই। আমি আপনাদের খুবই শ্রদ্ধা করি এই বীরভূমির বাসিন্দা হিসাবে। ক্ষুদিরামের মৃত্যু দিবস আত্মবলিদান দিবস বা অন্য কোনও মহাপুরুষ এর প্রয়াণ দিবসে এরকম গণআহারের রীতি আমি খুঁজে পাইনি। ধর্মগ্রন্থগুলিতেও এমন রীতি নেই।
অনেকে বলছেন মৃত্যু দিনের প্রসাদ। সেটাও মৃত্যু দিনে খাওয়ার রীতি নেই। সনাতনী মতে বাতসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এর যুক্তি যদি বলেন কেউ সেটা কিন্তু মৃত্যুদিনে হয় না।
আমি তাই অনুরোধ করবো, প্রতিটি বীরসিংহ বাসীর পা ধরে বলবো আমায় ভুল বুঝে এভাবে না ভেবে আসুন এবার থেকে ঈশ্বরের প্রয়াণ দিবসে অন্য ভাবে ভাবি। অন্নদান যদি করতে হয় আমি বলবো তাহলে দরিদ্র মানুষদের চাল ডাল তেল এসব বিতরণ করতে পারেন ঈশ্বরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
এভাবে গণ আহার গ্রহণের মাধ্যমে কীভাবে মহাপুরুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হয় সেটা আমার বোধগম্য হয় না।
আপনারা এখানে অনেক জ্ঞানীগুণি মানুষ আছেন যাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। আমার কোনও ব্যবহার বা কথায় যদি আপনারা আঘাত পান তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি সবার কাছে বার বার ক্ষমা চাইছি এবং তা সত্ত্বেও আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোদ ঈশ্বরের প্রয়াণ দিবসে গন আহার বন্ধ করুন। সকলের হাত ধরে এই অনুরোধ । আমার আবেগের মূল্য আপনারা বুঝবেন এই আশা করি।

নিউজ ডেস্ক: ‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: ss.ghatal@gmail.com •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।