এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

প্রতিভা থাকলে সব কিছু সামলেও এগিয়ে যাওয়া যায়

Published on: December 15, 2025 । 11:01 PM
কেয়া মণ্ডল চৌধুরী
কেয়া মণ্ডল চৌধুরী
আমার কলম ঘাটাল মহকুমার জীবনবোধের শরিক। আমি সামাজিক সমস্যার নিভৃত কান্না, অভাবের নীরব দীর্ঘশ্বাস এবং সাধারণ মানুষের গভীর অভিযোগের সুর শুনতে ভালোবাসি। আমার লেখনি আলো-আঁধারের গাঢ় পটভূমি এড়িয়ে চলে। খুন-খারাপি, রাজনৈতিক জটিলতা বা তীব্র দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য আমার উপজীব্য নয়। আমি ডুব দিই লোকায়ত জীবনের সরল জটিলতায়—ঘাটালের ধূলিকণা ও মানুষের আশা-হতাশা—এরাই আমার লেখনির প্রাণ। যা আমি ‘স্থানীয় সংবাদ’-এর মাধ্যমে তুলে ধরি।
📞 +919732738015 WhatsApp

কেয়া মণ্ডল চৌধুরী, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: বিয়ের পর একটি মেয়ে শুধু স্ত্রীর ভূমিকায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবে; তাকে হতে হবে নিঃস্বার্থ, সর্বত্যাগী! —সমাজ আমাদের এটাই শিখিয়েছে। এটা মেনে নিয়েই অনেক মেয়ে নিজের জীবনের অপূর্ণতা বয়ে নিয়ে চলে। কমবেশি প্রতিটি মেয়েরই কিছু না কিছু প্রতিভা থাকে, যা সংসারের চাপে বা পরিবেশ পরিস্থিতির প্রতিকূলতার জন্য বিকাশ পায় না, পর্যাপ্ত পরিপোষণ পায় না। আবার প্রতিকূলতার থেকে যদি নিস্তার মেলে কাছের মানুষজনগুলির সহযোগিতা না পাওয়ার জন্য অনেক প্রতিভায়

কবরচাপা পড়তে বাধ্য হয়।
কিন্তু এবার আমি এমন একজনের কথা তুলে ধরব, যিনি তাঁর বিয়ের পর কাছের মানুষের সহযোগিতায়  নিজের প্রতিভার স্বচ্ছলভাবে বিকাশ ঘটিয়েছেন, ইচ্ছেগুলোকে দিয়েছেন ডানা মেলে ওড়ার শক্তি। তাঁর নাম শিল্পা দাস, সোনাখালি বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা। তিনি এক বিশেষ প্রতিভার অধিকারিণী। স্যাক্সোফোনের শব্দধ্বনির হাত ধরে  রীতিমত মঞ্চে প্রলয় ঘটাচ্ছেন তিনি। একাধারে তিনি যেমন স্কুল শিক্ষিকা, অন্যদিকে তিনি দারুণ স্যাক্সোফোন বাজান। এমন একজন মানুষ সারা মহকুমায় বোধহয় তিনি একাই রয়েছেন। নেটিজেনরা তাঁর স্যাক্সোফোনের স্বরলিপির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।।সবার সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয় না। ঠিক তেমনই শিল্পার জন্ম এক নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি শহরে। বাবা ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী,

কাজকর্ম সেই ভাবে করতে পারতেন না। তিনি দুই মেয়ে এবং স্ত্রীর খাওয়া পরা টুকু চালাতে পারতেন, মেয়েদের সচ্ছলভাবে পড়াশুনার খরচ জোগান দিতে পারতেন না, প্রায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতই পরিস্থিতি।শিল্পা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। শত দারিদ্র্যের ছোবল সত্ত্বেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছেন এবং ২০০২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষাতে স্টার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তিনি নজরকাড়া রেজাল্ট করেন। এরপর তিনি মায়ের গহনা বিক্রির টাকায় পি.কে. কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তার জীবনে দেবদূতের মত আসেন সুব্রত প্রধান। শিল্পার জীবনে কাছের মানুষ এবং অভিভাবকের মত তাকে আগলে রাখেন। নিবিড় অধ্যাবসায় ও কঠোর পরিশ্রম শিল্পার জীবনে সাফল্য নিয়ে আসে। শিল্পা সোনাখালি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন এবং পরিবারে মা, বাবা ও বোনের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হন। যে একসময় দেবদূতের মত শিল্পার জীবনে আবির্ভাব হয়েছিলেন তাকেই পরবর্তীকালে স্বামী হিসাবে বরণ করেন। শিল্পা যে বিভিন্ন শিল্পকলায় পারদর্শী ছিলেন সেটা সুব্রতবাবু জানতেন। পরবর্তী কালে তিনি শিল্পাকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং শিল্পার জন্মদিনে একখানি স্যাক্সোফোন উপহার দেন। বিশেষ এই বাদ্যযন্ত্র বাজাতে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত শ্বাসের, ফলে তা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। এই পথচলাটা শিল্পার জীবনে সহজ ছিল না। একাধারে স্কুল, সংসার এবং সন্তান সামলে দীর্ঘ অধ্যবসায়ের পরেই তিনি এই শিল্প রপ্ত করতে শেখেন। কলকাতার সওকত আলি খান ছিলেন শিল্পার প্রথম স্যাক্সোফোন শিক্ষার গুরুজি। পরবর্তীকালে মুম্বাই নিবাসী এক্স আর্মি ম্যান তুষার রায়ের কাছে তিনি দু’বছর নিজের নিপুণতা বাড়ান। শুধু স্যাক্সোফোনই নয় শিল্পা প্রায় সাতরকমের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন এবং নাচ, গানেও সমানভাবে তিনি পারদর্শী। শিল্পার স্বামী ‘হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানের  জুনিয়র এক্সিকিউটিভ  পদে চাকুরিরত এবং ভীষণই ব্যস্ত মানুষ। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি শিল্পাকে সময় দেন প্রতিটি স্টেজ শো করার জন্য এবং সবসময়

পাশে থাকার চেষ্টা করেন। মূলত স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই শিল্পা একের পর এক অনুষ্ঠান করে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন। বছর দশেকের পুত্র সন্তান স্বর্ণাদিত্যও মায়ের স্যাক্সোফোনের অনুশীলন বেশ উপভোগ করে। দুই মেদিনীপুরের বাসিন্দারা চান, এই জুটি ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বলভাবে নিজেদেরকে তুলে ধরে শিল্পভাবনার বিস্তার ঘটাতে যাতে সক্ষম হন। সুব্রত-শিল্পার শিল্প উন্মোচনের মাধ্যমে গাইতে থাকুক স্যাক্সোফোনের মনোরম ধ্বনি।

নিউজ ডেস্ক

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: [email protected] •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।