দাসপুরের এই ঐতিহ্যমন্ডিত রথযাত্রার উল্টো রথ নেই, সারা রাজ্যের নজির এই রথযাত্রা

সৌমেন মিশ্র, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: এই রথযাত্রায় রথ মহাধুমধামে টানা হলেও এই রথে উল্টো রথ নেই।
[‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]
১২২৫ বঙ্গাব্দ থেকে এই শ্রীরাম নবমীর দিনে এই রথ টানা হচ্ছে। প্রবাদ আছে ‘রথ দেখবি নাড়াজোল। যাত দেখবি কানাশোল।’ কথা হচ্ছে  দাসপুরের নাড়াজোলের(narajol) রথযাত্রা নিয়ে। রামনবমীর বিকেলে কয়েক হাজার ভক্তের মাঝে নাড়াজোল রাজ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি দাসপুরের বিধায়ক(MLA) মমতা ভুঁইঞা, দাসপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার পাত্র সাথে বর্তমানে এই রথযাত্রা কমিটির সম্পাদক কুমারেশ ভুঁইঞা রথের রশিতে টান দিলে এই ২০২৪ এ ২০৬ তম রথযাত্রা শুরু হয়। নাড়াজোল এবং নাড়াজোল রাজবাড়ির ইতিহাস নিয়ে যিনি গবেষণা করে চলেছেন সেই দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা থেকে জানা গেছে ১২২৫ বঙ্গাব্দে মোহনলাল খান এই উৎসবের সূচনা করেন। মোহনলাল খান বারানসীতে(Varanasi) তীর্থ দর্শনান্তে শ্রীরামচন্দ্রের(Shri ram) স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হন নাড়াজোলে তাঁর মন্দির স্থাপনের জন্য। তাই ফেরার পথে অযোধ্যা(Ayodhya) থেকে মন্দিরের পাথর ও দেবমূর্তি গুলি সংগ্রহ করে এনে মন্দির তৈরি করে মূর্তিগুলির প্রতিষ্ঠা করেন।  এই উৎসব উপলক্ষ্যে দ্রাবিড় ও বেনারস(Banaras) থেকে পন্ডিতদের তিনি আনিয়ে ছিলেন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠায় ১২২৫ বঙ্গাব্দে খরচ হয়েছিল এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। ঐ বৎসরের শ্রীরামনবমীতে মোহনলাল খান রথযাত্রার সূচনা করেন। বহিঃ গড় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে লংকাধিপতির গড়ের অনুকরণে স্থানের নাম করন করেন লংকাগড়।

এই খান রাজাদের বর্তমান সমস্য সন্দীপ খান দেবেন্দ্রলাল খানের সময়ে যে আড়ম্বর সহকারে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো তার একটি বিবরণ তুলে ধরেন। দুটি সুসজ্জিত হাতি প্রথমে থাকত। তার পরে পঞ্চাশ জন রংবেরং এর পোষাক পরা ঘোড়সওয়ার। ঘোড় সওয়ারের পিছনে লাল পাগড়ি পরা আরও পঞ্চাশজন লোক থাকত। ঐ পঞ্চাশজনের পেছনে থাকত রথ এবং তার পিছনে রাজা ও রাজপরিবারের পালকি। লংকাগড়ে পৌঁছে রাজপুরোহিত রামচন্দ্রের প্রসাদী মালা রাজসম্মান হিসেবে রাজাকে দিতেন, তার পর শুরু হতো রাজসভা।

নাড়াজোলের রথের কিছু আচার অনুষ্ঠান আছে যা অন্য কোন স্থানের সঙ্গে মেলে না। রাজ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে এখনও সেই রীতি চলে আসছে। যদিও সেই আড়ম্বর নেই তবুও রীতির বদল নেই। রথের আগের দিন ‘দোহরি’ ভোেগ বলে একটি বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা আছে প্রত্যেক দেবতার জন্য। রথের দিন ‘চুর্মা’ নামের এক বিশেষ ভোগ তৈরি করেন রাজ পুরোহিত শুধু মাত্র রাজ পরিবারের জন্য। রথের আগের দিন পালকি, রথের ঘোড়া, সারথি সহ অন্যান্য দারুপুতুলগুলির পুজোর প্রচলন আছে।

বর্তমানে রথ পরিচালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্থানীয় মানুষ। রথ পরিচালন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব সহকারে ব্যারিকেড করে লংকাগড় পর্যন্ত রথ নিয়ে যান এবং নিয়ে আসেন। নাড়াজোলের রথে উল্টোরথের প্রথা নেই। সেই দিনেই রথ লংকাগড় থেকে নাড়াজোলে ফিরে আসে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!