মাত্র দুদিনের বৃষ্টিতে জলবন্দি ঘাটাল পৌরসভার ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড, কী বলছেন ওয়ার্ডবাসীরা?

সুইটি রায়, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল:  গত ২৯ ও ৩০ জুলাই এর ভারীবৃষ্টিতে ঘাটাল পৌরসভার ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টির জলেই প্লাবিত হয়েছিল মহকুমা হাসপাতাল, দোকানদানিসহ আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরও। শুধু তাই নয় দুটি ওয়ার্ডেরই জলনিকাশী ব্যবস্থা এতখানিই খারাপ যে এর জন্য বেশ কয়েকদিন জলযন্ত্রণা ভোগ করেছেন ওয়ার্ডবাসীরা। শুধু তাই নয় ড্রেনের নোংরা জল নেমে যাওয়ার পরও রাস্তাঘাট মুখ লুকিয়েছে আবর্জনার স্তুপে। আসলে বেহাল জল নিকাশিব্যবস্থাই এর প্রধান কারণ। পৌরসভা শুধুমাত্র ড্রেন বানিয়ে দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে নিজের। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ

করা তো দূরের কথা নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মজে যাওয়া ড্রেনের জলের সাথে বৃষ্টির জল মিশে তা উঠে আসে রাস্তাতে। যদিও এবিষয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যান বিভাসচন্দ্র ঘোষের বক্তব্য, বর্তমানে ঘাটাল পাঁশকুড়া সড়কের রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলার জন্য রাস্তার দুপাশের নয়ানজুলি বন্ধ করা হয়েছে। এই নয়ানজুলি দিয়েই দুটি ওয়ার্ডের জল বেরিয়ে যেত। নয়ানজুলি বন্ধ করার ফলেই এই জলযন্ত্রণা। কিন্তু পৌরবাসী খুব ভালো করেই জানেন যে এই যন্ত্রণা নতুন নয়। প্রতি বছরই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। কী বলছেন ১৬ ও ১৭ নম্বর

ওয়ার্ডবাসীরা?
লক্ষ্মীকান্ত রায়(শিক্ষক,১৭ নম্বর ওয়ার্ড): বর্ষাকালে জলযন্ত্রণা ঘাটালবাসীর নিত্যসঙ্গী। একদিকে শিলাবতীর জল অন্যদিকে বৃষ্টির জল এই দুই এর সমস্যায় জর্জরিত মানুষজন। পৌরসভার ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গা এতটাই নিচু এবং সর্বোপরি নিকাশিব্যবস্থা এতখানিই খারাপ এবং ড্রেনগুলি মজে যাওয়াতে বৃষ্টির জলেই প্লাবিত হয় রাস্তা। জল ঢুকে যায় লোকের বাড়িতে। এবছরের ঘটনা তো সবথেকে ভয়াবহ। প্রায় দুদিন ধরে বৃষ্টির জমা জল পাম্প চালিয়ে বের করতে হয়েছে মানুষজনকে। ওয়ার্ডের ড্রেনগুলি শেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছে তা সম্ভবত মনে করতে পারবেন না কোনও বাসিন্দাই। নিকাশিব্যবস্থাকে সুপরিকল্পিত ও নিয়মিত না করতে পারলে এই যন্ত্রণা বারবার ভোগ করতে হবে বাসিন্দাদের। এর সাথে সাথে দায়িত্ববান হতে হবে ওয়ার্ডবাসীদেরও। নোংরা-আবর্জনা, প্লাস্টিক ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়াও কিন্তু নিকাশিব্যবস্থাকে খারাপ করে তোলে।
কাশীনাথ মণ্ডল(শিক্ষক, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড):আমার বাড়ি তুলনামূলক নিচু এলাকায় তাই জলযন্ত্রণা এবার নতুন নয়। ফি বছর ভোগ করি এই যন্ত্রণা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায়। তবে শুধু বর্ষাতে নয় গতবছর শীতকালের বৃষ্টিতেও এই সমস্যা ভোগ করতে হয়েছে। মোটকথা নিকাশিব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে বৃষ্টি একটু বেশি হলেই অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। বৃষ্টির জল তো আছেই, তার ওপর এবারে এসডিও অফিসের গার্ড ওয়াল ভেঙে আসা জল জলস্তরকে আরও অনেকটা উঁচু করেছিল। প্রায় আট-দশ দিন সেই যন্ত্রণাও ভোগ করেছি।
প্রভাস সামন্ত(চিকিৎসক, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড): আমার বাড়ি এই ওয়ার্ডে না হলেও এখানে আমার একটি চেম্বার আছে। তাই আমাকে নিয়মিত এখানে আসতে হয়। আর বর্ষাতে আমাকেও ভোগ করতে হয় এই যন্ত্রণা। সত্যিই প্রতিবছর এই সমস্যা যেন পিছুই ছাড়তে চায় না ওয়ার্ডবাসীর। ড্রেনগুলিকে নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না।
কাকলি হড়(শিক্ষিকা, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড): গত ১২ বছর ধরে ঘাটালে বাস করছি এবং এরকম দুর্গতির শিকার বারবারই হচ্ছি। এইবার না হয় নয়ানজুলি বন্ধকে কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে কিন্তু সমস্যাটা নতুন নয়। হ্যাঁ, এটা বলা যায় যে এইবার বৃষ্টির জল কিছু বেশি সময় ধরেই জমে থেকে গিয়েছিল। তবে এই ঘটনা কিন্তু একেবারে নতুন নয়। প্রতিবছরই বর্ষাতে কিছুসময়েই জন্য হলেও এই দুর্গতি পোহাতে হয় আমাদের।
শ্রাবন্তী রায়(শিক্ষিকা, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড): এবারে মাত্র দুদিনের অতিবৃষ্টির ফলে ওয়ার্ডের নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হয়ে পড়েছিল। ডুবে গিয়েছিল রাস্তাগুলি। জল না বেরোতে পেরে অনেক বাড়ির মধ্যেই জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। প্রায় দুদিন ধরে জল কিছুতেই কমবার নাম করেনি। সত্যিই ভয়ানক পরিস্থিতি।
অনিল বেরা( ব্যবসায়ী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড): প্রতিবছরই বৃষ্টির জলে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ে ঠিকই তবে এবারের মতো ঘটনা এই প্রথম। একরাতের বৃষ্টিতেই রাস্তাতে এত জল জমেছিল যে তা হাসপাতাল, নার্সিংহোমসহ বিভিন্ন দোকানের মধ্যেও ঢুকে গিয়েছিল। আমার দোকানও তার বাইরে নয়। যেহেতু এরকম হতে পারে এই ধারণা ছিলই না তাই বৃষ্টির পরদিন গিয়ে দোকানের অনেক জিনিসই উদ্ধার করতে পারিনি। অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।
মামণি দাস(গৃহবধূ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড): প্রায় ১৫ বছর আমি এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বৃষ্টির জল বাড়িতে ঢুকে এরকম অসুবিধার সম্মুখীন কখনও হইনি।
কৃষ্ণা শাসমল(ছাত্রী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড): আমার বাড়ি কুশপাতা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে তুলনামূলক উঁচু জায়গায়, কুশপাতা শীতলা মন্দির সংলগ্ন এলাকাতে। আমার বাড়ির পশ্চিম দিক এবং উত্তর দিকে দুটি পুকুর রয়েছে। বৃষ্টি হলেই পাশাপাশি এলাকার জল গড়িয়ে এসে পুকুরগুলির জলস্তর বাড়ায় এবং তাতে করে রাস্তা এবং জলাশয় একাকার হয়ে যায়। রাস্তা চেনার উপায় থাকে না। নিকট প্রতিবেশীদের সাথে সেই সময় যোগাযোগ রক্ষাও সম্ভব হয় না।এখানে না আছে পাকা রাস্তা, না আছে নিকাশি ব্যবস্থা। প্রতি বৃষ্টিতেই আমরা এই জল যন্ত্রণার শিকার হই। এই বিষয়ে পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চন্দন দে(গাড়ি চালক, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড): দুদিনের বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তো ডুবেই গিয়েছিল আর ড্রেনের জল উপচে সেই নোংরা জল বাড়ির ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। সবথেকে খারাপ ব্যাপার হল প্রায় দুদিন সেই জল বের করতে পারিনি।
সুশান্ত মহাপাত্র (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড):একাশি মৌজার বাঁধ না ভাঙলে ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডবাসীদের জলযন্ত্রণা পোহাতে হয় না একথা ঠিক। তবে এই দুটি ওয়ার্ড সবথেকে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এবং জলনিকাশিব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার কারণে প্রতিবছরই বৃষ্টির জলেই রাস্তাগুলি প্লাবিত হয়ে পড়ে। পৌরসভা সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তির পথ নেই।
তাপস দালাল(ব্যবসায়ী, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড): আমরা প্রায় ৪০ বছর এখানে বাস করছি। প্রায় প্রতিবছরই অতিবৃষ্টিতে জল জমে রাস্তাতে। বারবার পৌরসভাতে জানিয়েও প্রতিশ্রুতি ছাড়া সেরকম কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এবারে তো অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা কী পরিস্থিতিতে বাস করছি তা ভাবতে পারবেন না। বৃষ্টির জল ড্রেন ও রাস্তা উপচে একেবারে বাড়ির মধ্যে। আমাদের ওয়ার্ডের জলনিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার কারণেই এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

'স্থানীয় সংবাদ'-এর সাংবাদিক। বাড়ি ঘাটাল শহরে(কুশপাতা ১৭ নম্বর ওয়ার্ড• পশ্চিম মেদিনীপুর)। আমার শহর ঘাটালের যে কোনও খবরই অবিকৃতভাবে সকলের সামনে তুলে ধরাতেই আমার আগ্রহ। •মো: 9732738015/9933998177 •ইমেল: [email protected]