সোনা নয়, টাকায় সোহাগা ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের, রাতারাতি লাখপতি গ্রামের সবাই

বিকাশ আদক, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: এ যেন হঠাৎ করে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পাওয়ার মতো ঘটনা। চারিদিকে মানুষের খুশির পারদ এক ধাক্কায় বেড়ে গেল। নিমেষের মধ্যে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঁচ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার তিনশ চৌত্রিশ টাকা।  ব্যালেন্স দেখে চক্ষু চড়কগাছ।  বেশিরভাগ মানুষই  নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন হয় নাকি? কোথা থেকে এল এত টাকা? সে হদিশ পাওয়ার আগেই গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎ বেগে চাউর হতে লাগল এমন খবর। বিলম্ব না করে আশায় বুক বেঁধে ভিড় জমাতে শুরু করল সি.এস.পি., সহজ তথ্যমিত্র, সাইবার ক্যাফ ও ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে।  এবার বোধহয় কষ্টের দিন অবসান হতে চলেছে।

গত ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায় চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের শ্রীনগর বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক ব্রাঞ্চের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গ্রাহকদের মধ্যে। শেরবাজ, দেপুর, লালাগঞ্জ,  আমদান, বগছড়ি থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর, কৃষ্ণপুর, লাহিরগঞ্জ,  ধর্ম্মপোতা,  ঘোষকিরা, চৈতন্যপুর, পারুলিয়া প্রভৃতি গ্রামসহ প্রায় ২০-৩০ টি গ্রামের বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে পাঁচ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার তিনশ চৌত্রিশ টাকা করে ঢুকতে শুরু করে। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় বিভিন্নপ্রান্তে। বিভিন্ন এলাকার  টাকা তোলার কেন্দ্রগুলিতে চোখে পড়ার ভিড় জমতে শুরু করে সন্ধ্যা থেকে রাত্রি পর্যন্ত।  উন্মাদনার অন্ত নেই। ব্যালেন্স চেক ও সঙ্গে টাকা পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চলে চারিদিকে। কোনো কোনো গ্রাহক অন্যত্র ছুটে যায় তাড়াতাড়ি টাকা পাওয়ার আশায়। আবার ব্যালেন্স ট্রান্সফার করার কমতি করেনি অনেকেই। ওই ব্যাঙ্কের বেশিরভাগ গ্রাহকই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তাদের কাছে এই টাকা সোনায় সোহাগার মতো।

পরেরদিন পর্যন্ত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলে বিভিন্ন কৌশলে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো গ্রাহকেরই আলাদিনের বর গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ব্যর্থ মনোরথে একের পর এক টাকা তোলার কেন্দ্রগুলি থেকে ফিরে আসে।

ব্যালেন্স চেক করা গেলেও টাকা তোলার ক্ষেত্রে লিঙ্ক ডাউন দেখায়। কারও আর টাকা স্পর্শ করা হয়ে উঠল না, দুঃস্বপ্নই রয়ে গেল। কৃষ্ণপুর গ্রামের রাজিবুর সরকার নামে এক গ্রাহক জানান,  দেনায় জর্জরিত জীবন থেকে ভেবেছিলাম এবার মুক্তি, কিন্তু তা আর হল না। অপরদিকে শ্রীনগরের পীরু মণ্ডল বলেন, ভাবনা তো ছিল অনেককিছু, কি আর করা যাবে। যা ছিল তাই হল। আবার কেউ কেউ এই টাকা নিয়ে কি করবে তার ছকও কষে ফেলেছিলেন।

যাইহোক, শুক্রবার নাগাদ যখন বিভিন্ন কেন্দ্রগুলিতে ব্যালেন্স চেক ও টাকা তোলার চাপ বাড়তে থাকে, কোনোভাবেই কাউকেই বোঝানো সম্ভব হয়নি, তখন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে ফোন করা হলে তিনি জানান, এটা সার্ভারের প্রবলেমের জন্য ঘটনাটি ঘটছে। যেসকল গ্রাহক আধার কার্ড দ্বারা টাকা লেনদেন করেন, কেবলমাত্র সেই সকল গ্রাহকদের এই ব্যালেন্স দেখাচ্ছে। কারণ এ.ই.পি.এস. (AEPS) অর্থাৎ আধার এনাবেল পেমেন্ট সিস্টেম (Aadhaar Enable Payment System)  ডাউন আছে এবং এর ফলে এই ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সদর দপ্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে, কাজ চলছে। আশাকরি, তাড়াতাড়িই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং এই সকল গ্রাহক তাদের নিজস্ব জমা টাকা তুলতে পারবেন।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!