আঁধারের পথ এগিয়ে আলোর খোঁজ- অশোক কুমার হালদার, (সাহিত্যিক, মালদা)

নিশাচর প্রাণী ছাড়া মানুষ আঁধারে থাকতে চায় না। সর্বদাই আলোর খোঁজ করে বা আলোর মধ্যেই থাকতে ভালবাসে। কিন্তু মানুষের সমাজে আলো আছে তবে অন্ধকার আছে। সে অন্ধকার নিরক্ষতার অন্ধকার এবং দুঃখ দারিদ্রতার অন্ধকার। ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের যেকোন অজ পাড়াগাঁয়ে গেলে দেখা যাবে, নিরক্ষরতা এবং দারিদ্রতার অন্ধকার।বর্তমানে কিছুটা নিরক্ষতার অন্ধকার দূরীভূত হলেও, বাস্তবিক ভাবে দারিদ্রতার অন্ধকারকে দূরীভূত করা সম্ভবপর হয়নি। নিরক্ষরতার অন্ধকার দূরীভূত করতে পারলে, তবেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে আঁধারের পথ থেকে একটু একটু করে আলোর দিকে এগিয়ে দিতে পারে কেবল শিক্ষার আলো। কারণ শিক্ষাই জাতির মেরদন্ড।

শম্ভু এবং রহিম একই গ্রামের দুই বন্ধু, সেই গ্রামের নাম নবিগ্রাম। লোক সংখ্যা অনুযায়ী গ্রামটি আয়তনে বেশ বড়সড়। সেই গ্রামে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করেন। গ্রামের মধ্যে যেমন উপাসনার জন্য পীরের দরগা আছে তেমনি আবার মন্দির, মসজিদও রয়েছে। গ্রামের যেকোনও অনুষ্ঠান বা গ্রামীণ মেলার উৎসবে সর্বশ্রেণীর মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে, মিলন উৎসবের সমারোহ ঘটায় এবং ওই উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে তা আবার পীর দরগার মেলা হোক বা কালীমাতার ভাষণ মেলা। ওই গ্রামের পাশেই ছোট বড় পাঠশালা এবং হাই মাদ্রাসা স্কুলও রয়েছে। গ্রামের ছেলে ও মেয়েরা ওই সব স্কুলে পড়াশোনা করে। আর বর্তমান কালো শিক্ষার আলো ছাড়া নিরক্ষরতার কালো আঁধার কাটানো সম্ভবপর নয়। তাই গ্রামের বেশীর ভাগ মাতা-পিতা তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নেবার জন্য ওই সব স্কুল গুলিতে পাঠায় লেখাপড়া শিখে মানুষ হবার জন্য। যে দেশ যত শিক্ষিত সেই দেশ তত উন্নত হয়, শ্রদ্ধাশীল হয় এবং বিনয়ী হয়। বর্তমান জাপান লেখাপড়ায় খুব উন্নত দেশ। জাপানি মায়েরা ছেলেমেয়েদের তিরস্কার করে না। কারণ তারা শিক্ষিত, শ্রদ্ধাশীল এবং বিনয়ী।

আদর্শ শিক্ষার আলো ছাড়া বিনয়ী বা শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায় না। যেমন পাশাপাশি একটি ফলের বাগানে গেলে দেখা যায় যে কোন গাছের শাখা প্রশাখা ফলের ভারে নুইয়ে পড়েছে, তখন বাগানের মালিক নুইয়ে পড়া ফল ভরা শাখা প্রশাখাকে বাঁচানোর জন্য অর্থাৎ যাতে ভেঙ্গে মাটিতে না পড়ে যায়, তার জন্য বিভিন্ন অবলম্বনের দ্বারা ওই ফল ভরা ডালপালাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। আবার ওই বাগানের অপর একটি বৃক্ষ, যে বৃক্ষটির কোন ডালপালা বা শাখা প্রশাখায় কোনও ফুল বা ফলের সমারোহ নাই, যেটা আছে, সেটা হল ওই বৃক্ষটির শাখা-প্রশাখাগুলি শুধুই উর্ধ্বপানে অর্থাৎ আকাশের দিকে গতি থাকে গাছটির শুধু বাড় বাড়ন্ত আছে উর্ধ্বদিকে কিন্ত একই মালিকের একই বাগানে বর্তমান। একই বাগানের দুই বৃক্ষের গুণাগুণ সম্পূর্ণ পৃথক। এই প্রকৃতির পরিবেশে বা প্রকৃতির সংসারে আমরা একই দৃশ্য দেখতে পাই। প্রকৃতির পরিবেশে আমরা মানব সমাজ জীবনে একই দৃশ্য দেখতে পাই। যে সকল মানুষের মধ্যে আর্দশ শিক্ষার এবং শিক্ষার গুণগত মান সাম্য অবস্থায় থাকে সেই সকল মানুষজনই শ্রদ্ধাশীল সৎ এবং বিনয়ী হয়। এর কারণে সমাজে এবং সংসারের মঙ্গল সাধন হয় এবং সমাজ এবং সংসার জীবন ধীরে ধীরে আঁধারের পথ থেকে উওরণ ঘটে এবং একটু একটু করে সমাজ এবং সংসার উন্নতির পথে এগোয় বা আলোর পথে অগ্রসর হয়। এই আলোর পথে নিয়ে যাবার ক্ষেএে একমাত্র সহায় কেবল শিক্ষা ব্যবস্থা। এই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যবোধের শিক্ষা শুরু হয় কেবল ঘর থেকে। পরিবারে শিশু মাতার কাছ থেকে মূল্যবোধের শিক্ষার পাঠ নেয়। আর সেই শিক্ষার বোধটাই এক সময়ে শেখায় বাগানের সেই নুইয়ে পড়া ফল ভরা গাছটির মত যে ব্যক্তি যত বেশী শিক্ষিত, সে তত আর্দশবান, শ্রদ্ধাশীল, সৎ পরোপকারী এবং সমাজের এবং দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বিনয়ী হয়। সমাজে ঐ সকল ব্যক্তি দায়িত্বশীল এবং আলোর দিশা দেখাতে সর্মথ হয়। আর সমাজের মানুষও ওই সকল শ্রদ্ধাশীল এবং দায়িত্বশীল এবং প্রগতিশীলও মূল্যবোধের শিক্ষার আলোর দিশা দেখানো পথে এগোতে চায় যারা আন্তরিকভাবে আলোর পথ খোঁজে।

শম্ভু এবং রহিম একই পাঠশালার দুই বন্ধু তারা দরিদ্র ঘরের সন্তান, কিন্তু তাদের মধ্যে এমন এক মানবিক মূল্যবোধের মানবিক গুণ বিরাজমান, যেটা তাদের আচার-আচরণ এবং কর্মগুণের মধ্যে প্রকাশ পাই। যখন তারা স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে, উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ব্রত বা ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল, তখন তাদের ভেতরে সেই মানবিক গুণগুলি ফুটে উঠেছিল, কারণ অভাবের সংসার দারিদ্রতা সব থেকে বড় বাধা, আর সেই বাধা আঁধারের থেকে কোন অংশে কম নয়। শম্ভু রাত্রে কাজ করত আর দিনের বেলায় লেখাপড়া করত। কারণ সে বুঝেছিল, যে আঁধার থেকে উওরণের পথ এক মাত্র শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া দারিদ্রতা অন্ধকার দূরীভূত করা সম্ভবপর নয়। অন্যদিকে রহিম তার বৃদ্ধ পিতাকে জমি-জমা এবং চাষবাসের ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সে বুঝেছিল যে তার বাবাকে কৃষিকার্যে সাহায্য করলে, তার পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, এবং সেখান থেকে তার পড়াশোনার খরচ চালানোটা সম্ভবপর হবে। এইভাবে দুই বন্ধু দারিদ্রতার অন্ধকার এবং নিরক্ষরতার আঁধার অতিক্রম করে আলোর পথে এগিয়ে ছিল। এই হচ্ছে জীবনসংগ্রাম এবং অন্ধকার অতিক্রম করার সংগ্রাম এবং একটু একটু করে আলো পথের খোঁজ করা।  (লেখকের ফোন নাম্বার:৭৪৭৭৭১৬৭৭২)

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!