সবজি বিক্রি করেই সংসার চালান চন্দ্রকোণা পৌরসভার এক কাউন্সিলার, মানুষের পাশে থেকে কাউন্সিলারের দায়িত্বও পালন করেন

তনুপ ঘোষ, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: একদিকে কাউন্সিলার অপরদিকে সবজি বিক্রেতা দুই কাজই সততার সাথে পালন করে চলেছেন  [‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] চন্দ্রকোণা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সমর দোলই। নেতা বা জনপ্রতিনিধি হওয়া মানেই যে আর্থিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধির মাধ্যম সেই ভাবনা খানিক হলেও বদলে দিয়েছেন চন্দ্রকোণা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সমর দোলই। ওই ওয়ার্ডের দলমাদল গ্রামে বাড়ি তাঁর। বছর ৩৪ এর সমরবাবুর বাড়ি বলতে দুটি রুম বিশিষ্ট ছোট পাকা বাড়ি তার সামনে টিন দিয়ে ঘেরা। এই বাড়িতেই বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাস করেন তিনি। বাবা লক্ষ্মীকান্ত দোলইয়ের পুঁজি বলতে বিঘা চারেক জমি, সেই জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে তা বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি দিনমজুর খাটেন অন্যের বাড়িতে। লক্ষ্মীকান্তবাবুর একমাত্র ছেলে সমরবাবু। ছেলে এমএ পাশ। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বাবার সাথে নিজেদের জমির সবজি নিয়ে চন্দ্রকোণার রেগুলেটেড বাজারে বিক্রি করেন তিনি। বেশকয়েক বছর ধরে বাবা আর পেরে না ওঠায় সমরবাবু নিজেই প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে চন্দ্রকোণার রেগুলেটেড বাজারে সবজি নিয়ে গিয়ে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করেন। মাঝে দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে একটি ডেলিভারি সংস্থায় ডেলিভারি বয় হিসেবেও কাজ করেছেন এই তৃণমূল কাউন্সিলার। রুজি-রোজগারের তাগিদে হাতের সামনে যখন যে কাজটা পেয়েছেন সততার সাথে সেটিই করে গিয়েছেন বলে জানান সমরবাবু। তবে বর্তমানে তিনি একজন জনপ্রতিনিধি তথা চন্দ্রকোণা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। দোলই পরিবার বরাবরই তৃণমূল সমর্থক হওয়ায় ২০২২ সালের পুর নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল-কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছিল সমর দোলইকে। জমি বন্ধক দিয়ে নির্বাচনের প্রচারের খরচ জুগিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

কাউন্সিলার হয়ে নিয়মিত ওয়ার্ডের মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা, তাদের খোঁজ-খবর রাখা এবং পৌর দপ্তরে সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিকেলে জমি থেকে বিভিন্ন সবজি তুলে রেখে তা পরদিন ভোর চারটায় বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা সবটাই দক্ষতার সঙ্গে করেন তিনি। বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের খোঁজ খবর নিয়ে তবেই তিনি বাড়ি ঢোকেন এবং  সাড়ে দশটা নাগাদ ফের বেরিয়ে পড়েন চন্দ্রকোণা পৌরসভা কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে। সেখানেও সময় দেন মানুষকে। কিন্তু কাউন্সিলার হয়েও সবজি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন কেন? এর উত্তরে সমরবাবু বলেন, সংসার চালাতে গেলে তো রোজগার করতে হবেই আমি সত পথে সেটাই করি। আজ কাউন্সিলার আছি পরের বার নাও থাকতে পারি, তবে বাজারে সবজি বিক্রি নতুন নয়, এটা আমি আগে থেকেই করে আসছি। তবে কাউন্সিলার হয়ে চাপ বাড়লেও যথাসাধ্য মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি।

এমন একজন সাদামাটা কাউন্সিলার পেয়ে খুশি ওয়ার্ডবাসীরাও। পাশাপাশি সমর দোলইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন চন্দ্রকোণা পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্রও। তিনি বলেন, সমর দোলইয়ের পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা ভালো নয়, কাউন্সিলার হয়েও বাজারে সবজি বিক্রি করতে হয় তাঁকে। তবে সমরবাবু তাদের কাছেও অনুপ্রেরণা বলে জানান চেয়ারম্যান। বর্তমান রাজ্য রাজনীতিতে একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে চন্দ্রকোণা পৌরসভার এই কাউন্সিলার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমই বলা চলে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

'স্থানীয় সংবাদ'-এর সাংবাদিক। ক্ষীরপাই শহরে(পশ্চিম মেদিনীপুর) বাড়ি। চন্দ্রকোণা থানা এলাকার যে কোনও খবরের জন্য আমাকে কল করতে পারেন। •মো: 9153931055/9732784129/9732738015 •ইমেল: [email protected]