বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের নামে প্রথম বরাদ্দ হলো ৩ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা, ফিরবে কি বীরসিংহের হাল?

মনসারাম কর, সাংবাদিক, স্থানীয় সংবাদ: আজ থেকে দুবছর আগের বীরসিংহ আর আজকের বীরসিংহের ছবি অনেকটাই আলাদা। বীরসিংহ বর্ণ পরিচয়ের স্রষ্টা বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি হওয়ায় সারাবিশ্বের দরবারে পরিচিত এই স্থান। অথচ বীরসিংহের পরিকাঠামো সেই কথা বলে না, এই অভিযোগ তুলে আজ থেকে দুবছর আগে এক প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশাসনের উপর ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বীরসিংহবাসী। ক্ষোভের তীর সেদিন এতটাই তীব্র ছিল যে প্রশাসনিক বৈঠক স্থান ছেড়ে কার্যত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন শাসকদলের নেতৃত্বরা। ক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনকে। তারপরেই টনক নড়ে শাসকদল ও প্রশাসনিক কর্তাদের। ক্ষোভের আঁচ পৌঁছায় জেলাশাসক ও মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে। শুরু হয় বীরসিংহের উন্নয়ন নিয়ে একের পর এক আলোচনা। বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মদিবসের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও

জেলাশাসকের উদ্যোগে বীরসিংহে খোলা হয় জন অভিযোগ কেন্দ্র। রাস্তা ও পথবাতি বসানো সহ বেশ কিছু কাজ হয় তৎকালীন সময়ে। বীরসিংহের জনরোষ কমাতে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয় জন অভিযোগ কেন্দ্র থেকে। তার মাঝেই কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে রাজ্য ব্যাপী চলে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে নানান রাজনীতি। সাথে সাথে প্রশ্ন ওঠে রাজ্যের তৃণমূল সরকার যেখানে বিদ্যাসাগরের ঐতিহ্য রক্ষায় মঞ্চকাঁপানো বক্তব্য রাখছে সেই সরকারের আমলে বিদ্যাসাগরের পূণ্যভূমি বীরসিংহ এত অবহেলিত কেন? ক্ষোভের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছাতেই বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশত বর্ষে বীরসিংহে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ম্বরে পালিত হওয়া দ্বিশত জন্মদিবসের মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষনা করেন বীরসিংহ হবে রাজ্যের এক আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র। বীরসিংহ সহ ঘাটাল ব্লকের কিছু এলাকাকে নিয়ে গঠন করা হবে বীরসিংহ উন্নয়ন পর্যদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন জেলাশাসক। সেই ঘোষণার পর হাসি ফোটে বীরসিংহের মানুষের। কিন্তু টানা দুবছর কেটে গেলে উন্নয়ন পর্ষদের কাজ নিয়ে শুরু হয় নানান

তরজা। গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর(২০২১) বিদ্যাসাগরের ২০২ তম জন্মদিবসে বীরসিংহের মাটিতে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল বলেন, বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের অফিসিয়াল কাজ শুরু হয়ে গেছে আগেই। সম্প্রতি উন্নয়ন খাতে প্রথম ধাপে তিন কোটি ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। সেই টাকা দিয়ে রাস্তাঘাট, স্মৃতি মন্দির, এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, পথবাতি সহ নানান কাজ করা হবে খুব শীঘ্রই। জেলাশাসক আরও বলেন, বীরসিংহের জন্য কী কী করতে হবে তা এলাকার মানুষ লিখিত আকারেও প্রশাসনকে জানাতে পারেন, প্রশাসন সেই আবেদন খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, বীরসিংহ প্রাণপুরুষ বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান হওয়ায় প্রতি বছর এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। স্কুল কলেজ থেকেও শিক্ষামূলক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এখানে অনেকেই আসেন। কিন্তু এখানে এসে কার্যত হতাশ হয়ে ফিরে যান পর্যটকদের একাংশ। বিভিন্ন সময় পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বীরসিংহ আসার আগে এখানকার পরিকাঠামো সর্ম্পকে যে চিন্তাধারা তাদের কাজ করে আসার পর সেই চিন্তাধারার বাস্তবরূপ দেখা যায় না। তাই কেউ একবার এলে বারে বারে আসার ইচ্ছেটা কমে যায় অনেকের। পর্যটকরা জানিয়েছেন, সহজে বীরসিংহ ঘোরার জন্য বাসস্টপ থেকে অটো, টোটো, ট্রেকার সহ অন্যান্য চারচাকা গাড়ির সু-ব্যবস্থা থাকা দরকার। পরিবহণ দপ্তরকে দিয়ে ঘাটাল-ক্ষীরপাই রোডের কিছু বাস রুট পরিবর্তন করে বরদাচৌকান-খড়ার-সিংহডাঙ্গা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পর্যটকদের জন্য বীরসিংহে রাত্রি যাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-কলেজ থেকে একদিনের জন্য আসা ছাত্র-ছাত্রীদের পিকনিক করার জন্য শেডযুক্ত খোলা জায়গা ও গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। হাতের কাছে পর্যাপ্ত পানীয়জল, শৌচালয় ও স্নানাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিনোদনের জন্য একটি সু-সজ্জিত পার্ক। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প এবং পর্যটকদের বীরসিংহ ঘুরিয়ে দেখাতে আই কার্ড যুক্ত প্রশিক্ষিত গাইড সহ নানান পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। এক শিক্ষক বলেন, এই অল্পকিছু পরিষেবা থাকলেই একলহমায় বদলে যেতে পারে বীরসিংহের ছবি। পর্যটকদের ভিড় বাড়লে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে। রুজি-রোজগার বাড়বে হোটেল ও খাবারের দোকানের ক্ষেত্রেও। এখন দেখার বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের হাত ধরে কতটা পাল্টায় আগামী বীরসিংহ।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: [email protected] •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।