বাংলার রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় গদ্দার জ্যোতি বসু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রীকান্ত পাত্র: ইদানিং গদ্দার শব্দটি নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে রাজনৈতিক দলের কারবারিরা। দল ছেড়ে অন্য রাজনৈতিক দলে নাম লেখালেই তাঁকে গদ্দার বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। গদ্দার একটি আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বাসঘাতক। দল ছাড়ার মুহূর্তেই তিনি হয়ে যান গদ্দার। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ খাড়া করা হয়। কাল যিনি ছিলেন সোনার টুকরো আজ তিনি হয়ে যান রানীগঞ্জের কয়লা খনির এক তাল কয়লা। বঙ্গ রাজনীতিতে এই গদ্দারি রাজনীতি চলে আসছে সেই ষাটের দশকের শেষ থেকে। কিন্তু তা নিয়ে এতটা কেউ মাথা ঘামাতো না। এই বাংলায় গদ্দারি রাজনীতির চর্চা বহুলভাবে শুরু হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। যেদিন মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি তে যোগ

দেন। তিনি দল ছাড়তেই তাঁকে গদ্দার বলে দেগে দিয়েছিলেন তাঁর এককালের সহযোদ্ধারা। তারপর থেকে বাংলার রাজনীতিতে গদ্দার শব্দটি বেশ চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। সেই অর্থে রাজনৈতিক গদ্দারদের তালিকায় চলে আসতে পারেন বাংলার প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় ও জ্যোতি বসু আর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ধারে ভারে এই তিনজন কিন্তু বড় গদ্দার। এবার আমরা এঁদের গদ্দারি রাজনীতির পরিচয়টা দেওয়া যাক।
প্রথমেই আসি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় প্রসঙ্গে। অজয়বাবু আদতে ছিলেন কংগ্রেসের পরিচিত নেতা। ১৯৬৭ সালে গোটা দেশ জুড়ে জাতীয় কংগ্রেসের খারাপ সময় চলছে। এই সময় সাধারণ নির্বাচনে অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের সাথে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে খারাপ ফল

করে কংগ্রেস। তারপর ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেস দলের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জেরে কংগ্রেস দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তার আগে থেকেই রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অজয় মুখোপাধ্যায় মতবিরোধের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে বাংলা কংগ্রেস গঠন করেন। সেটা ১৯৬৬ সাল। ১৯৬৭ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সি পি আই ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে জোট করে ৬৫ টি আসন দখল করে বাংলা কংগ্রেস। আর সিপিএম র নেতৃত্বে বামপন্থী ফ্রন্ট ৬৮ টি আসন দখল করে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস একাই ১২৭ টি আসন পায়। কিন্তু কংগ্রেস সরকার গড়তে পারে নি। অজয়বাবুর নেতৃত্বে প্রগতিশীল সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রন্ট সিপিএম জোটের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করে। অজয়বাবু হন রাজ্যের প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকাররের মুখ্যমন্ত্রী। এই সময় থেকেই কংগ্রেস কার্যত লাটে উঠতে শুরু করে। এর জন্য মূলত অজয় মুখোপাধ্যায় কেই দায়ী করা হয়। আজকের রাজনীতির আকচা আকচি তে অজয়বাবু কিন্তু বাংলার রাজনীতির প্রথম গদ্দার। তাই নয় কি ?
এবার আসি রাজ্যের প্রথম বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রসঙ্গে। জ্যোতি বসু র আদি পার্টি কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া বা সিপিআই। কয়েকটি নীতিগত প্রশ্নে তৎকালীন দলের সম্পাদক এস এ ডাঙ্গে র সঙ্গে মতবিরোধের জেরে জ্যোতি বসু সহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ১৯৬৪ সালে সিপিআই ছেড়ে সিপিআই (এম ) দল গঠন করেন। এবং ১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপ মুখ্যমন্ত্রী হন জ্যোতি বসু । তারপর ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারেরও উপ মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ধীরে ধীরে সিপিএম রাজ্যে বাড়তে থাকে। আর সিপিআই কার্যত সাইনবোর্ডে পরিণত হতে থাকে। ১৯৭৭ সালের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন জ্যোতিবাবু। নিজের আদি দলকে সাইনবোর্ডে পরিণত করে ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করেন জ্যোতিবাবু ও তাঁর দল। বর্তমান রাজনীতির ভাষায় তিনিও একজন রাজনৈতিক গদ্দার। তাই কি না ?
এবার আসি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রসঙ্গে। অগ্নিকন্যা নামে মমতা বন্দোপাধ্যায় র পরিচিতি কিন্তু কংগ্রেসের হাত ধরে। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর আসনে জয়লাভ দিয়ে শুরু তাঁর রাজনৈতিক উথান। হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও. তারপর থেকে নিজেকে রাজ্য কংগ্রেসের উর্দ্ধে ভাবতে শুরু করেন। তৎকালীন রাজ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বকে হেয় করতে শুরু করেন তিনি। তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্বের বাম বিরোধী কৌশল ছিল তাঁর না পসন্দ। বিরোধিতা করতে করতে ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস দল ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মমতা। একরকম লুকিয়ে কংগ্রেস দলে থাকতে থাকতে ১৯৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে তৃণমূল কংগ্রেসের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিলো। আর ১৯৯৮ সালের ১ লা জানুয়ারী তৃণমূল কংগ্রেসের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এদিনই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিন থেকেই কংগ্রেস তাঁর আদি দল ডাস্টবিনে যেতে শুরু করে। সাজ তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁর আদি দল ?  মনে আছে ১৯৯৭ সালের ৯ আগস্ট কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামএ কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলছে। সেখানে যোগ না দিয়ে গান্ধীমূর্তির নিচে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে জমায়েত করেছিলেন মমতা । সেদিন তাঁর মন্তব্য ছিল  ‘ওঁরা সভা করে ইনডোরে, আমরা আউটডোরে ‘। সেদিনই তাঁর আদি দল কংগ্রেসের বারোটা বাজিয়ে গদ্দারের তকমাটা নিয়েছিলেন মমতা। নয় কি ? আজ যখন মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারীরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি তে যোগ দেন এই মমতাই তাঁদের গদ্দার আখ্যা দেন। শুনে ঘোড়াও হাসে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!