হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এ পুজোয়,দাসপুরের সেন বাড়ির এ ডাকাতে কালী যন্ত্রে পূজিত

সৌমেন মিশ্র, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: একশো নয় দু’শো নয়, ৫৫৯ বছরে পদার্পণ করল সেন বাড়ির এবার ২০২১ এর কালী পুজো। মূর্তি পুজোর প্রচলন তখনও হয়নি। ঘট ও তামার উপর যন্ত্র এঁকে সেই যন্ত্রেই সেন বাড়ির পুজো চলত তখন। গ্রামের চাঁদদিঘির পাড়ের ডাকাত সর্দার ও তার দলবলকে সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে আজ থেকে ৫৫৯ বছর আগে নীলাম্বর সেন পরিবারের কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সেই পুজোর যন্ত্রের সাথেই যোগ করেছিলেন ডাকাতদের কালীকে। সেই থেকেই সে কালী সেন বাড়ির কালী হয়ে গেছে। দাসপুর-১ ব্লকের চাঁদপুর গ্রামের এই সেন পরিবারের বর্তমান সদস্য শতাধিক,কর্মসূত্রে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই গ্রামের বাইরে। তবে পুজোর দিনগুলো বাড়িতে কাটান সবাই মিলে।
সেন বাড়ির বর্তমান সদস্যদের মধ্যে ওঙ্কারনাথ সেন জানান, ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ থেকে এতগুলো বছর ধরে তাঁরা এই কালী নিজেরা নিজেদের উদ্যোগ ও খরচে পুজো করলেও আজও কালীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা বা চক্ষু দানের সময় যে বলি হয় সেই বলি কিন্তু চাঁদপুরের চাঁদ দিঘির পাড়ের সেই দোলই ডাকাতের নামেই হয়।

পরিবারের গৃহবধূ প্রতিভা সেন জানান,তাঁদের এই পুজোতে রাতের অন্ধকারে আখ চুরি করে আনতে হয়। চুরির আখ ছাড়া বলি হয়না। পুজোর রাতে ঘট ডুবানোর পর ওই ডাকাত পরিবারের বর্তমান সদস্যরা রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে যান। বহুদূর থেকে আখ চুরি করে আনলে তা বলি দিয়েই কালীকে প্রসন্ন করা হয়। আবার এত বছরের পুজোয় প্রত্যেকবার পুজোর ঘটে ছিদ্র থাকবেই,অলৌকিকভাবে সে ছিদ্র পুজো শুরুর সময় থেকে উধাও হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের দাবি তাঁদের এই কালী আসলে জ্যান্ত কালী এবং সদা জাগ্রত। ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে তাঁদের এ কালীর কাছে তাঁদের সমস্যা তুলে ধরেন,সমাধানও পান।

চাঁদপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ঘাটাল মহকুমার সাহিত্য ইতিহাস নিয়ে যিনি গবেষণা করে চলেছেন সেই উমাশঙ্কর নিয়োগী জানান,মূর্তি পুজোর অনেক আগে তা প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে তামার পাতে বিশেষ চিহ্ন এঁকে তার পুজো করার মাধ্যমে দেবদেবীর আরাধনা করা হত,একেই বলা হয় যন্ত্র। অনেক পরে মূর্তি পুজোর প্রচলন শুরু হয়। সেন বাড়ির এই যন্ত্র স্বভাবতই কয়েকহাজার বছর পুরানো এবং প্রাচীন। এই পুজোকে ঘিরে নানান ইতিহাস নানান ঘটনার মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য নিজদের পারিবারিক পুজোর যন্ত্রের সাথে ডাকাতদের কালীকে যুক্ত করে ডাকাত সর্দারকে ডাকাতি থেকে বিরত করা এবং সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। বর্তমানেও সেই পরিবারের সাথে এই সেন পরিবারের সংযোগ এই কালীকে কেন্দ্র করেই।

লাগাতার করোনা পরিস্থিতি তারই মাঝে চাঁদপুরের সেনবাড়ির এই ঐতিহ্যমণ্ডিত কালী পুজো ঘিরে সাজো সাজো রব এখন সেন পাড়ায়। ইতি মধ্যেই পরিবারের সদস্যরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন, টানা এক বছর পর আবার এই কালীই মিলিয়ে দেবে তাঁদের।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!