আজ ৮-ই মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে ঘাটালের মহকুমা শাসকের বিশেষ আবেদন

আজ ৮-ই মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস , রেডক্রশ দিবস এবং বিশ্ব মা দিবস 
সুমন বিশ্বাস, মহকুমা শাসক, ঘাটাল
এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘাটাল মহকুমায় তিনটি রক্তদান শিবির আয়োজিত হবে।
•ঘাটাল রেডক্রশ সোস্যাইটির উদ্যোগে ঘাটাল টাউন হলে রক্তদান শিবির এবং •থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। •পলাশপাই এর রামপুর স্কুল প্রাঙ্গণে দিলীপ কুমার গুচ্ছাইত চ্যারিটেবল ট্রাস্টের উদ্যোগে রক্তদান শিবির এবং •গৌরার চিত্তরঞ্জন মাইতির পুত্র ডাঃ অরিন্দম মাইতির বিবাহ উপলক্ষে মাইতি পরিবার আয়োজন করেছে রক্তদান শিবিরের।
এছাড়াও বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে বীরসিংহ বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে নব সাক্ষর মায়েদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
থ্যালাসেমিয়া মেজর অর্থাৎ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত যারা তাদের নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত নিতে হয়।
একবার ভাবুন!
একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যায়। থ্যালাসেমিয়া মেজর[‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] শিশু জন্মের পরেও কিন্তু আলাদা করে কিছু বোঝা যায় না কিন্তু এক বছর বা এরকম সময়ের মধ্যেই প্রকট হয় লক্ষণগুলি। তখন থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাখার লড়াই। আপনার নিকট আত্মীয়ের বা বন্ধুবান্ধবের এই সমস্যা থাকলে আপনি অনুধাবন করতে পারবেন এই যন্ত্রণা। রক্তদান আন্দোলনের সাথে যুক্ত থেকে অনুধাবন করেছি এই যন্ত্রণা। রিক্সাচলক পিতা থেকে শুরু করে দোকানদার পিতার ক্রন্দন আমায় বারে বারে ব্যথিত করেছে। নিজে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়ে সেই ব্যথা আরও বেশি করে বুঝেছি আমি। অনেকে আমাকে রক্তচোষা বিডিও বলতো এখন হয়ত রক্তচোষা এসডিও -ও বলে। ভ্যাম্পায়ার, ড্রাকুলা এসব নামও হয়েছিল আমার। তবুও রক্তের জন্য কেউ কষ্ট পাক বিশেষত থ্যালাসেমিয়া মেজর শিশুরা রক্তের জন্য কষ্ট পাক, তার পরিবারের মানুষের চোখে জল ঝরুক এটা আমার মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।
থ্যালাসেমিয়া সমাজের অভিষাপ, এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?
একমাত্র উপায় বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা কিন্তু আমরা কতজন এই জেনেটিক্যাল রোগের হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যত্‌ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য এই কাজটি করি?
বাবা ও মায়ের মধ্যে দুজন যদি ক্যারিয়ার হন তবেই সন্তানের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫%
সেই মেন্ডেলের মটর গাছের এক শঙ্কর জনন পরীক্ষার বেঁটে মটর গাছ হওয়ার ২৫% সম্ভাবনার নিয়মে এই রোগ সঞ্চারিত হয় অপত্যে। অথচ যে সন্তানটি ভুমিষ্ঠ হল তার কিন্তু কোনও দোষ ছিল না। শুধু মাত্র আমাদের অজ্ঞতার জন্য এই রোগ ছড়াচ্ছে। আমার পরিচিত বহু মানুষের সন্তান এই রোগের সাথে লড়াই করছে। আমার মত কিছু মানুষ যারা রক্তদান আন্দোলনের সাথে যুক্ত তারা এই লড়াই দেখেছি, আমরা সেই সব পিতামাতার সাথে এই লড়াইয়ে সহযোদ্ধা।
এই ২৫% এর গল্প বললাম না, এরই কিছু বাস্তব উদাহরণ আমি দেখেছি। আমার এক পরিচিত সরকারী কর্মচারী ভালবেসে বিয়ে করছিলেন, সেই দম্পতি বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষাও করিয়েছিলেন কিন্তু তারা কমিটেড ছিলেন তাই বিয়ে করেছিলেন। এখন আবার ভ্রূণ অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া টেষ্ট করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু ৩ বার গর্ভবতী হয়েও গর্ভস্থ সন্তানের টেষ্ট রিপোর্ট পজেটিভ আসায় গর্ভপাত করাতে হয়েছে। পরে অবশ্য তারা সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও আমরা বিয়ের আগে কুষ্ঠি পরীক্ষা করাই কিন্তু থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তার পরীক্ষা করাই না।
এই পরীক্ষা নিয়ে আমি কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। যেহেতু আমি নিজে থ্যালাসেমিয়ার বাহক তাই আমি বিডিও থাকাকালীন চেষ্টা করতাম ব্লকের বিদ্যালয়গুলিতে ১৫ বছরের উপর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা পরীক্ষা করানোর। জানিয়ে রাখি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে প্রতি জেলায় থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট আছে যার মাধ্যমে প্রতি বিদ্যালয়ে এই স্ক্রীনিং ক্যাম্প করানো সম্ভব। এর জন্যে কোনও অর্থ ব্যয় করতে হয় না।
এই টেষ্ট করানোর পর দেখা যেত প্রতি স্কুলেই ৫-৭ জন বা কোথাও আবার ১০-১৫ জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক বেরোতো। এদের রিপোর্ট আবার খুব গোপনীয় ভাবে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের জানানো হত। একবার এক স্কুলে সেই রিপোর্ট কোনও ভাবে অন্য কেউ জেনে নেওয়ার পর খুব সমস্যাও হয়েছিল। কিন্তু আবার তাদের সচেতন করা হয়েছিল। আসলে একজন বাহক হলে কোনও সমস্যা হয় না। একটি লম্বা (TT) মটর গাছ আর একটি লম্বা (Tt) মটর গাছের জননের ফলে সব মটর গাছই লম্বা হবে বড় জোর তারা বেঁটে মটর গাছের জীন বহন করবে। সেই রকম ভাবে একজন বাহক আর সাধারণ অর্থাৎ অবাহকের বিয়ে হলে বড় জোর থ্যালাসেমিয়া বাহক সন্তান জন্মাবে কিন্তু সে রোগ নিয়ে জন্মাবে না।
যেমন আমি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিন্তু আমার বউ বাহক নয় তাই আমার সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়নি। যদি আমি এবং আমার বউ দুজনেই বাহক হতাম তাহলে সমস্যা হত।
আমরা রক্তদান নিয়ে যারা কাজ করি, যারা এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত তারা জানি স্বেচ্ছা-রক্তদানের একট বড় অংশ থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীদের রক্তের চাহিদা মেটাতে ব্যয় হয়। তাই আসুন সবাই আজকের এই পবিত্র দিনে শপথ করি নিজেদের পরিচিত সকলের বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা করাতে অনুরোধ করবো।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

•‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সাংবাদিক। ঘাটাল মহকুমার যেকোনও খবর আমাকে সরাসরি পাঠাতে পারেন। মো: 9933998177/ 9732738015